Editors Choice

3/recent/post-list

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আইএমএফের কঠিন প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ সরকার

খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আইএমএফের কঠিন প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ সরকার

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এর অন্যতম শর্ত ছিল বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া। তবে, এ শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি, বরং খেলাপি ঋণের পরিমাণ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। আগামী বছরেও খেলাপি ঋণ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসছে আইএমএফ-এর একটি মিশন, যেটি সরকারের কাছে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশল জানতে চাবে।

আইএমএফ-এর প্রশ্ন থাকবে- কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং কেন হঠাৎ এত ঋণ খেলাপি হয়ে গেল? পাশাপাশি, আগের সরকারের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এসব কারণে এবার বাংলাদেশের সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়বে।

সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ-এর প্রশ্নের মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুতি নিয়েছে। মিশনের সামনে এবার অতীত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে যে বিশাল লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। পাচার হওয়া ঋণের পরিমাণও সামনে আনা হবে, যেগুলোর আদায় সম্ভব নয় বলে সেগুলোকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঋণ পরবর্তীতে আরও বেশি পরিমাণে খেলাপি হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে, আগের সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতের প্রকৃত তথ্য গোপন ও জালিয়াতি আড়াল করার চিত্রও তুলে ধরা হবে।

আইএমএফ-এর ঋণের চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বরে ছাড় হতে পারে, তবে তার আগে তৃতীয় কিস্তির শর্তগুলি পর্যালোচনা করা হবে। এসব শর্তের অগ্রগতি নিয়ে মিশনটি সরকারের কাছ থেকে প্রতিবেদন চেয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। মিশনটি সরকারের কাছে বাড়তি অর্থের চাওয়া এবং তা কীভাবে পাওয়া যাবে, সে বিষয়েও আলোচনা করবে।

আইএমএফ-এর শর্ত ছিল, আগামী মার্চের মধ্যে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই শর্ত পূরণের জন্য গত বুধবার একটি সার্কুলার জারি করেছে, যা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। নতুন নিয়মে, ঋণের কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ থেকে তিন মাস পরই ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে, মেয়াদি এবং কৃষিঋণ ক্ষেত্রে খেলাপি হওয়ার সময়সীমা ছিল ছয় মাস, যা তিন মাসে কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আইএমএফ-এর ঋণ শর্ত অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল, কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২০.৯৯ শতাংশ, যা এখন বেড়ে ৪০.৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার শর্ত থাকলেও, গত ডিসেম্বরে তা ছিল ৫.৯৩ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৮৮ শতাংশে।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে গত ১৫ বছরে যে বিশাল জালিয়াতি হয়েছে, তার একটি বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। আগে এসব ঋণ খেলাপি হওয়ার যোগ্য হলেও, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তারা এগুলোকে নিয়মিত হিসেবে দেখিয়েছেন। তাই খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হয়েছিল। তবে, নতুন সরকারের আমলে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার ফলে গত দু'টি ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এদিকে, ফেব্রুয়ারিতে খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল, যার মধ্যে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, এখন নানা কারণে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব হচ্ছে না, আর আগামী বছরেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে।

আইএমএফ-এর আরেকটি শর্ত ছিল ঋণখেলাপিদের সম্পদ জব্দ করে সেগুলোর থেকে ঋণ আদায় করা। এ জন্য সরকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, এ ধরনের কোম্পানি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে, কারণ দেশে এ কাজের জন্য অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের অভাব রয়েছে। তবে, ভারত ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুপারিশ করেছেন ব্যাংকাররা।

এমন পরিস্থিতিতে, আইএমএফ-এর মিশনের সামনে বাংলাদেশ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।


Post a Comment

1 Comments

  1. চিন্তার বিষয়!!! হাসিনা খালার ডিজিটাল বাংলাদেশের একি অবস্থা।

    ReplyDelete